আপনার রান্নাঘরেই এমন কিছু খাবার আছে যা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে জাদুর মত কাজ করতে পারে

1
Food photo created by timolina – www.freepik.com

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে চান? কিন্তু জানেন কি আপনার রান্নাঘরেই এমন কিছু খাবার আছে যা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে জাদুর মত কাজ করতে পারে। আসুন একনজরে দেখে নেওয়া যাক কী করে এবং কীভাবে খাবারের সাথে আপনার প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলবেন।

কীভাবে খাদ্য ইমিউন সিস্টেমকে প্রভাবিত করে?

ইমিউন সিস্টেমের কার্যকর করতে পুষ্টি কতটা গুরুত্বপূর্ণ বলা মুশকিল। তবে রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ তৈরি করতে আমাদের অন্যরকম ফাইটোকেমিক্যালস (উদ্ভিদে জৈবিক রাসায়নিক যৌগগুলি) দরকার যার ঘাটতি আমাদেরকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। আবার, বয়স বাড়ার সাথে সাথে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে, আর তাই বয়স বাড়ার সাথে সাথে কিছু বিশেষ খাবার নিয়মিত খাওয়ার প্রতি গুরুত্ত দিতে হবে যেগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বুস্ট করতে সাহায্য করবে। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে পুষ্টির ঘাটতি বয়স্কদের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এমনকি 35 বছর বয়সের তরুণদের মধ্যেও। তবে সুসংবাদ হচ্ছে, বয়স্ক ব্যক্তিরা যখন প্রতিদিন পাঁচ ধরনের ফল এবং শাকসবজি খান, তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যদের থেকে অনেক ভাল থাকে।

যত বেশি ফল ও শাকসবজি খাবেন ততই ভালো। সর্বোত্তম প্রতিরোধের জন্য আপনার দরকার সর্বোত্তম পুষ্টি। সর্বাধিক প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর ভিটামিন এবং খনিজগুলির মধ্যে রয়েছে ফোলেট, জিংক, আয়রন, বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন বি 6, বি 12, সি, ডি এবং ই।

সুতরাং আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় একবার চোখ বুলানো উচিত নয় কি?

আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সেরা খাবারগুলি কী কী?

Photo by freestocks.org from Pexels

সাইট্রাস ফল

ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য দুর্দান্ত কাজ করে। এটি সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। আমাদের শরীর ভিটামিন সি সংরক্ষণ করে রাখতে পারে না। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারগুলি অন্তর্ভুক্ত করুন। আমলকি, কমলা, লেবু, পেয়ারা, ব্রকলি, টমেটো ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার।

রসুন

কাঁচা রসুন শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে কাজ করতে সাহায্য করে। রসুনে প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা আমাদেরকে অসুস্থতা থেকে মুক্তি দিতে এবং দ্রুত শক্তি ফিরে পেতে সহায়তা করে। কাঁচা রসুন রক্তে স্বেত কনিকার সংখ্যা (টি-সেল) বাড়িয়ে তুলতে পারে যা ভাইরাসের সাথে লড়াই করে। রসুনের কোয়া টুকরো টুকরো করে কেটে সালাদ ড্রেসিং এ ব্যবহার করুন, কারণ কাঁচা রসুন খাওয়া সর্বোত্তম।

দই 

দইয়ে রয়েছে লাইভ অ্যাক্টিভ কালচার নামক একটি সাবস্টেন্স যা একধরণের স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া। এই ব্যাকটেরিয়া আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে উন্নত করতে সহায়তা করে। কারণ এটি আমাদের দেহের অন্য খারাপ ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে। এছাড়াও এগুলো শরীরে শ্বেত রক্তকণিকা তৈরি করতেও সাহায্য করে।

Food photo created by jcomp – www.freepik.com

আদা

আদা একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট হিসাবে পরিচিত। এটি জীবাণু বিরোধী হিসাবেও কাজ করে এবং সংক্রামক রোগ থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। কাঁচা আদাতে জিনজারল নামক একটি যৌগ থাকে যা ক্যান্সার বিরোধী হিসাবেও কাজ করে। বিভিন্ন জুস অথবা স্মুদিতে আদা গ্রেট করে ব্যবহার করতে পারেন অথবা আদা পানিতে জ্বাল দিয়ে লেবুর রস মিশিয়েও খেতে পারেন।

গ্রিন টি

গ্রিন-টি ও সাধারণ চা উভয়ই ফ্লেভানইড নামক শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এছাড়া গ্রিন-টি তে এপিগ্যালোক্যাথেসিন গ্যালেট থাকে দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে। কিন্তু দানাদার বা পাউডার চা বানানোর প্রক্রিয়ায় এই এপিগ্যালোক্যাথেসিন গ্যালেট নষ্ট হয়ে যায়। তাই সাধারণ চা থেকে গ্রিন-টি বেশি কার্যকর।

তরমুজ

তরমুজে সিট্রুলাইন রয়েছে যা আপনার হার্ট সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। এছাড়া তরমুজ ভিটামিন এ, সি এবং বি 6 সমৃদ্ধ। তরমুজের লাল অংশ আপনার দেহকে লাইকোপিন সরবরাহ করে যা আপনার প্রতিরোধ ব্যবস্থার ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।

Food photo created by bearfotos – www.freepik.com

মাশরুম

এটি একটি অত্যন্ত কার্যকরি খাদ্য উপাদান। মাশরুম আমাদের দেহে নানা ধরণের ইনফেকশনজনিত রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা তৈরি করে। মাশরুমের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান দেহে রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস ধ্বংস করতে সহায়তা করে। মানুষের মতই মাশরুম যখন ইউভি আলোর সংস্পর্শে আসে তখন তারা ভিটামিন ডি সংশ্লেষ করে। অতএব, ইউভি আলোতে জন্মানো বা বন্য মাশরুম স্বাস্থের জন্য বেশি উপকারি। মাশরুম হল ভিটামিন ডি এর একমাত্র উদ্ভিদ উৎস, যা প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে।

জিংক সমৃদ্ধ খাবার

শ্বেত রক্ত কণিকা উৎপাদনের জন্য জিংকের প্রয়োজন হয়, আর শ্বেত রক্ত কণিকা শরীরে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রধান হাতিয়ার। এছাড়া জিংক স্বাস্থ্যকর ত্বক, চুল এবং নখের জন্যও দরকারি। সামুদ্রিক খাবার, ডিম, ছোলা, মাশরুম, কুমড়োর বীজ, সূর্যমুখীর বীজ এবং কাজু বাদামে পর্যাপ্ত জিংক পাওয়া যায়।

আপেল

আপেল স্যলিউবল ফাইবারের উৎকৃষ্ট উৎস যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাছাড়া আপেলে নানা ধরণের অত্যন্ত শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা শরীরের কোষের ক্ষতি হওয়া রোধ করে এবং শরীরে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না। ২০১০ সালের একটি গবেষণা প্রবন্ধে প্রকাশিত হয়েছে যে, যেসব ইঁদুরকে স্যলিউবল ফাইবার যুক্ত খাবার খাওয়ানো হয় তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ইনস্যলিউবল ফাইবার যুক্ত খাবার খাওয়া ইঁদুর থেকে অধিক শক্তিশালী হয়। পরীক্ষায় দেখা গেছে, স্যলিউবল ফাইবার যুক্ত খাবার খাওয়ানো ইঁদুরের শরীরে ইন্টারলিউকিন-৪ নামক এক ধরণের অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপদান অধিক পরিমাণ তৈরি হয় যা জীবাণু ধ্বংস করতে সহায়তা করে।   

 

HalchalBD

We are a group of professionals, decided to share our knowledge and interests for your better being.

One thought on “আপনার রান্নাঘরেই এমন কিছু খাবার আছে যা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে জাদুর মত কাজ করতে পারে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Next Post

ডেঙ্গু- যেসব তথ্য অবশ্যই জানতে হবে

Mon Mar 23 , 2020
মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস, বিশেষ করে গরম ও বর্ষা এই দুই সময় ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ বেশি থাকে। বর্ষাকাল আসতে এখনও মাস দুয়েক সময় আছে। কিন্তু ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব এখনই শুরু হয়ে গেছে। গতবছর এই সময় যতজন ডেঙ্গু রোগী ছিল এই বছর তার চারগুণ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের থেকে সম্প্রতি […]

You May Like

error: Content is protected !!