অনেক আগে থেকেই আদা মসলা হিসেবে ও চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হত। খাওয়ার পর অনেক সময় ব্লটিং এর সমস্যা হয় এবং শরীর ভারী ভারী লাগে। এমন পরিস্থিতিতে এক কাপ আদা চা স্বস্তি এনে দিতে পারে। আদা পাকস্থলির যে কোন সমস্যা থেকে আরাম দেয় আর হজমেও সাহায্য করে।
১। রক্তচাপ কমাতে ও হার্ট ভালো রাখতে
বিভিন্ন দেশের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে আদা সেবন হৃদরোগের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক হতে পারে। আদা আমাদের শরীরের-
১. রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে
২. হার্ট অ্যাটাকের ঝুকি কমায়
৩. রক্ত জমাট বাধা থেকে রক্ষা করে
৪. জ্বালাপোড়া রোধে কাজ করে
৫. কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে
৬. রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা করে
২। ওজন নিয়ন্ত্রণে ও ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে
কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ২০১২ সালে ১০ জন অতিরিক্ত ওজনের ব্যক্তির উপর একটি স্টাডিতে দেখা গেছে, খাওয়ার আগে আদা গুঁড়া করে গরম পানির সাথে পান করলে ক্ষুধাভাব কমে যায়। ফলে তাদের খাবার প্রবণতা হ্রাস পায়। এছাড়া এটি শরীর থেকে টক্সিন ও অন্যান্য বর্জ্য বের করে দিতে সাহায্য করে। যার ফলে ওজন কমাতেও কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
অন্য কিছু গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে আদা রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে, টাইপ 2 ডায়াবেটিসযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ইনসুলিন এবং ট্রাইগ্লিসারাইড হ্রাস করতে সহায়তা করতে পারে।
৩। রোগ প্রতিরোধে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে
আদা বিভিন্ন ধরণের অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে ভরপুর। এসব অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার করতে এবং রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে। আদা চা থেকে যে বাষ্প নির্গত হয় তা সাধারণ সর্দি, অ্যালার্জি এবং শ্বাস প্রশ্বাসের অন্যান্য সমস্যা উপশমে খুবই কার্যকরি।
এমনকি গবেষণায় দেখা গেছে যে আদা ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। পরীক্ষাগারে দেখা গেছে আদা অগ্ন্যাশয় ক্যান্সার এবং কোলন ক্যান্সারসহ বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।
৪। ব্যাথা উপশমে
আদা বহু শতাব্দী ধরে প্রদাহের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে এবং এর পিছনে এখন অনেকগুলি বৈজ্ঞানিক প্রমাণও রয়েছে। বিশেষ করে হাঁটুতে অস্টিওআর্থারাইটিস থেকে ব্যথা উপশম করতে এটি বেশ কয়েকটি গবেষণায় কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। আদা চা মাথা ব্যথা, ঋতুস্রাবের ব্যথা, ঘাড়ে পেশী এবং অন্যান্য ধরণের ব্যথা উপশম করতেও সহায়তা করে।
৫। মোশন সিকনেস কমাতে
চলন্ত গাড়িতে লবণ দেয়া শুকনা আদা খাওয়া বাংলাদেশে অনেক আগে থেকেই প্রচলিত। ফোক মেডিসিন অনুযায়ী আদা চা মোশন সিকনেস থেকে যে সমস্যাগুলো হয় যেমন- মাথা ঘোরানো, বমিভাব ও ঘেমে যাওয়া এগুলো প্রশমিত করতে সাহায্য করে। যদিও মোশন সিকনেস এর জন্য বাজারে পাওয়া ওষুধই সবচেয়ে কার্যকর তবে হ্যাঁ, বিভিন্ন ওষুধের সাইড ইফেক্টের কথা মাথায় রাখলে আদার গুরুত্বও কোন অংশে কম হয় না। তাই চলন্ত যানবাহনে যদি আপনার সমস্যা হয় তাহলে আদা চা বা শুধু আদা খেয়ে দেখতে পারেন।
৬। প্রাতঃকালীন অসুস্থতা বা কেমোথেরাপিজনিত বমিভাব কমাতে
গর্ভাবস্থায় বা কেমোথেরাপি চলাকালে ওষুধ সেবনে অনেক বাধানিষেধ থাকে। কিছু বিশেষজ্ঞ বিশ্বাস করেন আদাতে সক্রিয় উপাদানগুলি (উদ্বায়ী তেল এবং ফিনল মিশ্রণ) গর্ভাবস্থা, কেমোথেরাপি বা শল্য চিকিত্সার কারণে সৃষ্ট বমিভাব দূর করতে সহায়তা করে। তবে অস্ত্রোপচারের পরে আদা ব্যবহার করার আগে ডাক্তারের সাথে কথা বলা উচিৎ, কারণ এটি রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দিতে পারে।
কিভাবে খাবেন?
১। আদা-মধু
প্রয়োজনীয় উপকরণ
আদা- ১ ইঞ্চি পরিমাণ (পাতলা করে কেটে নেওয়া)
পানি- ২ কাপ
মধু- স্বাদ অনুযায়ী
লেবুর রস- ১ টেবিল চামচ
প্রণালী
একটা প্যানে পানি ও আদা নিয়ে জ্বাল করতে হবে। আদার ফ্লেভার গাড় না হালকা চান সেই অনুযায়ী ১০-১৫ মিনিট জ্বাল করবেন। তারপর চুলা থেকে নামিয়ে লেবুর রস এবং স্বাদ অনুযায়ী মধু যোগ করে নিবেন।
২। শুকনা আদা
প্রণালী
আদা কুঁচি কুঁচি করে পরিমাণমত লবণ মিশিয়ে রোদে শুকিয়ে নিন। ভাল করে শুকানো হলে বায়ুরোধী কৌটায় ভরে রাখুন ও প্রয়োজনমত সেবন করুন।
৩। আদা চা
চায়ের সাথে আদা কুঁচি দিয়ে সেবন করুন।